মালয়েশিয়া’র ‘মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রাম’ (এমএম টু এইচ)। গেল ১০ বছর এ প্রোগ্রাম গ্রহণে বাংলাদেশের নাগরিকরা রয়েছেন দ্বিতীয় অবস্থানে । বাংলাদেশের ঠিক আগে চীন। গেল দুই বছর অর্থাৎ ২০১১ ও ২০১২ সালে বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে সেকেন্ড হোম সুযোগ গ্রহণের মাত্রা বেড়েছে। অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। এর আগে ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৭ সালে চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময় ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এমন হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন বাংলাদেশীরা। মালয়েশিয়া দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে এ সুবিধা চালুর পর থেকে গেল জুলাই পর্যন্ত ২৩৭০ জন বাংলাদেশী ‘সেকেন্ড হোম’ সুবিধা নিয়েছেন। এ সুবিধা পেতে মালয়েশিয়ার ব্যাংকে মোটা অঙ্কের অর্থ জমা রাখতে হলেও এদেশের সুযোগ গ্রহণকারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে নানাবিধ সমস্যার মুখে পড়তে পারেন এমন আশঙ্কায় অনেকে সেকেন্ড হোম নিয়ে থাকতে পারেন। এটা দেশের জন্য কোন মতেই সুখকর নয়। কারণ দেশের কোটি কোটি টাকা এর মাধ্যমে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এদেশের কারা কারা এ সুবিধা গ্রহণ করে তার একটি তালিকা সরকারের কাছে থাকাটা জরুরি। তাহলে সরকার তাদের সব কিছু ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে ২৭৬ জন বাংলাদেশী মালয়েশিয়ার মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রামের সুবিধা নিয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ২২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৮ জন, মার্চে ১১ জন, এপ্রিলে ২৬ জন, মে’তে ১৫ জন, জুনে ১৪ জন, জুলাইতে ৩০ জন, আগস্টে ১৫ জন, সেপ্টেম্বরে ২৯ জন, অক্টোবরে ৩১ জন, নভেম্বরে ১৪ জন এবং ডিসেম্বরে ৪১ জন এ সুবিধা নিয়েছেন। ওই বছর এ সুবিধা গ্রহণে বাংলাদেশ ছিল চতুর্থ অবস্থানে। ২০১২ সালে বাংলাদেশীদের মধ্যে এ সুবিধা গ্রহণের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। এ বছরের জুলাই পর্যন্ত ২৮৮ জন এ সুবিধা নিয়েছে। ২০১১ সালের জুলাই পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ১১৬। তাই বছরের ছয় মাসের মধ্যেই ২০১১ সালের সুবিধা গ্রহণকারীদের সংখ্যা অতিক্রম করেছে। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ২১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৫২ জন, মার্চে ৫০ জন, এপ্রিলে ২৪ জন, মে’তে ৩৪ জন, জুনে ৫৪ জন এবং জুলাইতে ৫৩ জন সেকেন্ড হোম সুবিধা নিয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যত উত্তপ্ত হচ্ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম সুবিধা গ্রহণকারীদের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। এর আগে ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৭ সালেও সেকেন্ড হোম সুবিধা গ্রহণের হিড়িক পড়েছিল। এর মধ্যে ২০০৫ সালে সর্বোচ্চ ৮৫২ জন বাংলাদেশী সেকেন্ড হোম সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এ পর্যন্ত ওই বছরই সর্বোচ্চ বাংলাদেশী এ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া, ২০০৬ সালে ৩৪১ জন ও ২০০৭ সালে ১৪৯ জন বাংলাদেশী সেকেন্ড হোম সুবিধা নিয়েছেন। ২০০৬ সালে সেকেন্ড হোম সুবিধা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের মধ্যে প্রথম। ওদিকে ২০০২ সাল থেকে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত মালয়েশিয়া ১৯ হাজার ১৬০ জনকে এ সুবিধা দিয়েছে। এর মধ্যে ২০০২ সালে ৮১৮ জন, ২০০৩ সালে ১৬৪৫ জন, ২০০৪ সালে ১৯১৭ জন, ২০০৫ সালে ২৬১৫ জন, ২০০৬ সালে ১৭২৯ জন, ২০০৭ সালে ১৫০৩ জন, ২০০৮ সালে ১৫১২ জন, ২০০৯ সালে ১৫৭৮ জন, ২০১০ সালে ১৪৯৯ জন, ২০১১ সালে ২৩৮৭ জন এবং ২০১২ সালের জুলাই পর্যন্ত ১৯৫৭ জন। মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট সূত্রে জানা গেছে, গেল ১০ বছরের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, এ পর্যন্ত চীনের ৩২৬২ জন সেকেন্ড হোম সুবিধা গ্রহণ করে প্রথম হয়েছে। এরপরই বাংলাদেশ। এদেশের ২৩৭০ জন এ সুবিধা নিয়েছেন। এছাড়া, ২০৮৩ জন নিয়ে জাপান তৃতীয়, ১৮৭৯ জন নিয়ে যুক্তরাজ্য চতুর্থ, ১২০২ জন নিয়ে ইরান পঞ্চম, ৮৪৭ জন নিয়ে সিঙ্গাপুর ষষ্ঠ, ৭৬৫ জন নিয়ে তাইওয়ান সপ্তম, ৭৬১ জন নিয়ে পাকিস্তান অষ্টম, ৬৬৯ জন নিয়ে ভারত নবম এবং ৬৬৩ জন নিয়ে কোরিয়া দশম অবস্থানে রয়েছে। মালয়েশিয়া দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, যে কোন দেশের নাগরিক মালয়েশিয়ার মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এজেন্সি মারফত বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সরাসরি এ প্রোগ্রামের সুবিধার জন্য আবেদন করা যাবে। এজন্য ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে পাঁচ লাখ রিঙ্গিত জমা রাখতে হবে। তবে দ্বিতীয় বছরে অর্ধেক অর্থ তুলে নিতে পারবেন সুবিধা গ্রহণকারীরা।
Categories:

0 comments:

Post a Comment

Subscribe to RSS Feed Follow me on Twitter!