বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে যুক্ত হলো ৪র্থ প্রজন্মের অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক!!
গত ১৩ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে কেনা চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক “এমবিটি-২০০০”। তেজগাঁওয়ে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে এই সমরাস্ত্র অন্তর্ভুক্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,
“এই প্রথম নিজস্ব অর্থায়নে নতুন ও অত্যাধুনিক ট্যাংক কেনা হলো।”
আসুন জেনে নেই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে যুক্ত অত্যাধুনিক  এই ট্যাঙ্ক সম্পর্কে।
এটি মূলত সম্মুখ যুদ্ধ ট্যাঙ্ক 90-II MBT গোত্রের একটি অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক। এটি ১ম তৈরি হয় ১৯৯১ এর শেষের দিকে “নরিঙ্কো” নামক চায়না কোম্পানিতে। তারপর চায়না ও পাকিস্থানের যৌথ উদ্দোগে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে উন্নতিসাধন করা হয়।  এর ট্যাংকটির গঠনপ্রণালীর মধ্যে ১ম অংশে চালক, মাঝে যুদ্ধ উপকরণ আর শেষের দিকে রয়েছে পাওয়ার প্যাক বা ১২০০ হর্স পাওয়ার 6TD-2 liquid-cooled ডিজেল জ্বালানী ইঞ্জিন যেটির নকশা করেছে ইউক্রেনের কারকিভ ম্রোজফ ডিজাইন ব্যুরো। এটির ২স্ট্রোক, ৬সিলিন্ডার সম্পন্ন সুপারচার্জ  ইঞ্জিন তৈরি করেছে ব্রিটিশ পারকিন্স ইঞ্জিন কোম্পানি আর ট্রান্সমিশন সিস্টেমে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্রেঞ্চ SESM ESM 500 হাইড্রো-মেকানিক্যাল অটোমেটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেম। সাস্পেন্সন সিস্টেমে রয়েছে  টরসন বার হাইড্রোলিক শক এ্যবসরভার। এই ট্যাংকটি ৩জন চালক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করা হয়।
এটির মুল আকর্ষণ হলো ৪৮ ক্যালিবারের এবং ১২৫ মিলি মিটার ব্যাসের ক্রোম প্লেটিং করা কামান যেটি সম্পূর্ণ অটোমেটিকভাবে লোড হয়। এই কামান ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকারের উচ্চ বিস্ফোরক গোলা ছাড়াও লেজার নিয়ন্ত্রিত অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল ছোড়া যায়। এটির স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় সবসময় ২৪ রাউন্ড গুলি প্রস্তুত থাকে এবং গুলি করারত অবস্থায় প্রতি মিনিটে ৮ রাউন্ড করে গুলি লোড করতে পারে। কামান ছাড়াও এতে একটি ৭.৬২ মি.মি মেশিনগান এবং একটি ১২.৭ মি.মি. এয়ার ডিফেন্স মেশিনগান আছে। মূল গানার এর দেখার সুবিধার জন্যে রয়েছে দুটি দৃষ্টিবর্ধক উচ্চ প্রযুক্তির দূরবীন সাইট। ট্যাঙ্ক কম্যান্ডার এর জন্যে রয়েছে উচ্চ প্রযুক্তির প্যারানোমা ভিত্তিক পর্দা, যার ফলে আশেপাশের ৩৬০ডিগ্রি পর্যন্ত দেখা যায়। দেখার যন্ত্র বা ভিসন সাইট গুলি দ্বি-মাত্রিক এবং এবং প্রত্যেকটিতে লেজার ভিত্তিক দূরত্ব মাপক স্কেল আছে। এতে স্বয়ংক্রিয় টার্গেট ট্র্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে গতিশীল কোন টার্গেটকেও আঘাতহানতে সক্ষম। এর কার্যকরী রেঞ্জ ২০০ হতে ৭০০০ মিটার পর্যন্ত।
কুয়াশা, তুষার কিম্বা রাতের অন্ধকারে আঘাত হানার জন্যে এতে আছে নাইট ভিসন এবং দ্বি-মাত্রিক থার্মাল ইমেজ প্রযুক্তি। এই সকল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০০ হতে ৯৯৯০মি. পর্যন্ত দেখা যায়। এর স্বয়ংক্রিয় গোলাগুলির নিয়ন্ত্রণ সমন্বয় ব্যবস্থা ট্যাংকটিতে অবস্থিত ১০টি গোপন সিলিকন ফটোডায়ড সেন্সর এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। চীনের তৈরি এই ট্যাংক একবার জ্বালানি নিয়ে ৪৫০ কিলোমিটার যেতে পারে।পেছনের অংশে জরুরি অবস্থায় ব্যবহার করার জন্যে ২টি অতিরিক্ত ডিজেল এর ড্রাম রাখার জায়গা রয়েছে। ট্যাঙ্কটির ইলেক্ট্রনিক্স ইকুইপমেন্ট গুলি চালনা করার জন্যে ১২ থেকে ২৪ ভোল্ট ডিসি ব্যাটারি ব্যাবহার করা হয়। সাধারণ সড়কে এর সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৬৩ কিলোমিটার, ওজন ৪৮ হাজার কিলোগ্রাম। এই ট্যাংকে রয়েছে বিস্ফোরক প্রতিরোধক কম্পোজিট আর্মার যেটি যেকোন ধরনের আক্রমণ ছাড়াও কেমিক্যাল, বায়োলজিক্যাল প্রভৃতি আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে।আর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এটি পানিতেও চলতে পারে। ১.৪০ মিটার থেকে শুরু করে ৫ মিটার গভীরতায় এটি অনায়াসে চলতে পারে। এর সমস্ত যন্ত্রপাতি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত। এটির প্রোগ্রাম চলে "Integrated Battlefield Management System" (IBMS) এর মাধ্যমে যার কোড নেম 'Rehbar'। এর নেভিগেসন সিস্টেমে ব্যবহার করা হয় Inertial Navigation System (INS) এবং  জি.পি.এস স্যাটেলাইট নেভিগেসন সিস্টেম। ট্যাংক গুলি উচ্চ প্রযুক্তির ডাটা লিঙ্ক ব্যাবহার করে নিজেদের মধ্যে অডিও এবং ভিডিওর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা বজায় রাখে।

এখন দেখার বিষয় হলো ৪র্থ প্রজন্মের এই অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর গৌরব গাঁথায় আরো কি কি সুনাম যোগ করে
তথ্য সংগ্রহঃ armyrecognition.com, wikipedia. গুগল এবং বিভিন্ন ব্লগ হতে।
Categories:

0 comments:

Post a Comment

Subscribe to RSS Feed Follow me on Twitter!