সাবসনিক, সুপারসনিক, হাইপারসনিক৷ যাত্রীবাহী বিমান চলে সাবসনিক
গতিতে ৷ অর্থাৎ শব্দের চেয়ে কম গতিতে৷ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র একটি
হাইপারসনিক বিমানের পরীক্ষণ ফ্লাইট চালিয়েছে ৷ যেটি উড্ডয়নের ৩১ সেকেন্ডের
মধ্যেই ভেঙে পড়ে ৷যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষণমূলক এই বিমানটির নাম ‘ওয়েভরাইডার' বা এক্স-৫১এ ৷
এটি শব্দের গতির চেয়ে ছয়গুন বেশি জোরে চলতে চেয়েছিল৷ অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায়
প্রায় সাত হাজার কিলোমিটার বেগে৷ এর ফলে নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডন যেতে সময়
লাগতো এক ঘণ্টার চেয়েও কম ৷ বর্তমানে যাত্রীবাহী বিমানগুলো চলে ৮০০ থেকে
৯৫০
কিলোমিটার বেগে ৷যুক্তরাষ্ট্রের এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য অবশ্য যাত্রী
বহন নয়৷ তাদের
লক্ষ্য এই গতিকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে এক ঘন্টার মধ্যে
হামলার যোগ্যতা অর্জন৷ সেজন্য ওয়েভরাইডারকে বিমান বলা হলেও এটা হতে পারে
একটা ক্ষেপণাস্ত্র, যেটা অস্ত্র নিয়ে ছুটে গিয়ে সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত
হানবে ৷পরীক্ষণ চলাকালে বিজ্ঞানীদের আশা ছিল ওয়েভরাইডারকে অন্তত পাঁচ মিনিট
ওড়ানোর ৷ কিন্তু মাত্র ৩১ সেকেন্ডই প্রশান্ত মহাসাগরে ভেঙে পড়ে
মনুষ্যবিহীন এই ফ্লাইটটি ৷ বিমানের ‘ফিন' বা ডানায় ত্রুটির কারণে পরীক্ষাটি
সফল হয়নি বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা ৷এই প্রকল্পে কত খরচ হয়েছে সেটা জানায়নি
মার্কিন বিমান বাহিনী কর্তৃপক্ষ ৷
বোয়িং কোম্পানির প্রকৌশলীরা এই বিমানের নকশা ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজটি
করেছেন ৷বিমান বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তাদের কাছে আরও একটি
ওয়েভরাইডার
রয়েছে ৷ সেটাকে দিয়ে ভবিষ্যতে আবারও পরীক্ষা চালানো হবে কিনা- সেটা এখনো
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি ৷এর আগে ২০১০ সালে পরিচালিত আরেকটি পরীক্ষায়
ওয়েভরাইডার তিন মিনিটের একটু বেশি সময় ধরে শব্দের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি
গতিতে চলেছিল ৷ তবে অ্যামেরিকা হামলা চালানোর জন্য হাইপারসনিক বিমান তৈরির
পরিকল্পনা
করলেও ইউরোপ কাজ করছে হাইপারসনিক যাত্রীবাহী বিমান তৈরির ৷ শব্দের গতির
চেয়ে
পাঁচ গুণ বেশি জোরে চলার পরিকল্পনা করছেন বিজ্ঞানীরা ৷ তাঁরা যে বিমান
তৈরির পরিকল্পনা করছেন তার নাম ‘এ২' ৷ এটা সম্ভব হলে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস
থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি যেতে সময় লাগবে মাত্র ২-৪ ঘণ্টা ৷তবে বিজ্ঞানীরা
বলছেন, ২০৪০ সালের আগে এ ধরণের বিমান ওড়ার সম্ভাবনা নেই ৷ ইউরোপীয় কমিশন
এর খরচ বহন করছে ৷ শুরুতে এই প্রকল্পের জন্য ১০ মিলিয়ন ইউরো
বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৷ আগামী বছর প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে৷তবে
সুপারসনিক বিমান কনকর্ডের অতীত ইতিহাসের কারণে হাইপারসনিক বিমানে
চড়ার স্বপ্ন মানুষের পূরণ হবে কিনা - তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ৷কেননা
হাইপারসনিক বিমান বানানো সম্ভব হলেও এর টিকিটের যে দাম হবে সেটা দিয়ে বিমান
কোম্পানিগুলো লাভবান হতে পারবে কিনা, সেটা একটা বড় প্রশ্ন৷কনকর্ড বিমানের
একটা টিকিটের মূল্য ছিল যাত্রীবাহী বিমানের প্রথম শ্রেণির
টিকিট মূল্যের চেয়েও প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি ৷ ফলে সেটা সাধারণ যাত্রীদের
ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল ৷ তাই কনকর্ডকে আর না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ আর এয়ার ফ্রান্স ৷ এই দুই কোম্পানিরই শুধু কনকর্ড বিমান
ছিল ৷ অবশ্য ২০০০ সালে একটি কনকর্ড বিমানের দুর্ঘটনাও কনকর্ড বন্ধ করে
দেয়ার
অন্যতম একটা কারণ ছিল ৷‘বিজনেস ট্রাভেলার' ম্যাগাজিনের টম ওটলে বলছেন,
যাত্রীদের কাছে তাড়াতাড়ি
যাওয়ার চেয়ে কম খরচ আর আরাম বেশি গুরুত্বপূর্ণ ৷ ফলে হাইপারসনিক বিমানের
পরিণতি কনকর্ডের মতোই হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি ৷
সাম্প্রতিক এক জরিপেও দেখা গেছে ধনী ব্যক্তিরাও টাকা বাঁচাতে সরাসরি ফ্লাইটের চেয়ে ‘সরাসরি নয়' এমন ফ্লাইটই পছন্দ করেন ৷
এদিকে ‘রিঅ্যাকশন ইঞ্জিনস' নামের একটি কোম্পানি যারা হাইপারসনিক বিমান
তৈরির কাজে জড়িত তারা বলছে, এই বিমানের টিকিটের মূল্য সাধারণ বিমানের
‘বিজনেস ক্লাস'-এর মূল্যের সমান হবে ৷তবে সমালোচকরা বলছেন, এটা তখনই সম্ভব যদি হাইপারসনিক বিমান জ্বালানি
হিসেবে তরল হাইড্রোজেন ব্যবহার করতে পারে ৷কিন্তু এজন্য পর্যাপ্ত তরল
হাইড্রোজেন উৎপাদন সম্ভব হবে কিনা-তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন
সমালোচকরা ৷
রয়টার্স, বিবিসি
0 comments:
Post a Comment